স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ জাতিসংঘের সকল শর্ত পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের এপ্রিল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। ১৬ মার্চ ২০১৮ আনুষ্ঠানিকভাবে মানদণ্ড পূরণের স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশের ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে।
২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা অনুযায়ী মানদণ্ড
সূচক | অন্তর্ভুক্তি | উত্তরণ | বাংলাদেশের অর্জন |
GNI | ১,০১৮$ বা এর কম | ১,২২২$ বা এর বেশি | ১৮২৭$ |
HAI | ৬০ বা এর কম | ৬৬ বা এর বেশি | ৭৫.৩ |
EVI | ৩৬ বা এর বেশি | ৩২ বা এর কম | ২৭.২ |
মাথাপিছু আয় ও জিডিপি
২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় ২,২২৭ মার্কিন ডলার আর মাথাপিছু GDP ২,০৯৭ মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) GDP’র নতুন ভিত্তি বছর ২০১৫-১৬ ধরে গণনা শুরু করলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ২,৫৫৪ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা GDP’র প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫%। ৩০ জুন ১৯৭২ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম বাজেট অর্থাৎ, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ ৫০ বছরের পথচলায় দেশ যেমন উন্নত হয়েছে বাজেটের
তৈরি পোশাক রপ্তানি
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০ সালে। রিয়াজ গার্মেন্টস প্রথম ১৯৭৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক একটি ফার্মের সাথে ১৩ মিলিয়ন ফ্রাংক মূল্যের ১০ হাজার পিস ছেলেদের শার্ট রপ্তানি করে। বর্তমান বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের : অবস্থান তৃতীয়।
মধ্যম আয়ের দেশ
১ জুলাই ২০১৫ বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত করে বিশ্বব্যাংক। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বাংলাদেশ ছিল নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায়। বিশ্বব্যাংক প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করে নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশ।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগে
৩০ নভেম্বর ২০১৭ পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম ও একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে ৩২তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হয়। রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নির্মাণ কাজ করছে রাশিয়ার ‘রোসাটম’। ১০ অক্টোবর ২০২১ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম চুল্লি বা রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
খনিজ সম্পদ
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ৩৯.৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১ অনুযায়ী, দেশের জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা প্রায় ১৩.৬০ লক্ষ মেট্রিক টন। দেশে এখন পর্যন্ত ৫টি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এগুলোতে কয়লার মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ৩,৩০০ মিলিয়ন টন। এছাড়া দেশে আবিষ্কৃত পিট কয়লা মজুদের পরিমাণ প্রায় ৫১০ মিলিয়ন টন। দিনাজপুরের মধ্যপাড়ার ১২৮ মিটার গভীরতায় প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের ২৫০ কোটি বছরের অতি পুরাতন কঠিন শিলা আবিষ্কৃত হয়।
বিদ্যুৎ খাত
বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৬টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,২৩৫ মেগাওয়াট। দেশে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ১৪ লক্ষ। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতকরা ৯৯.৭৫ ভাগ। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৩,৭৯২ মেগাওয়াট।
সমুদ্রজয়
১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ শুরু হয় । বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমুদ্র এলাকা এবং মহীসোপানে নিরঙ্কুশ অধিকারের দাবিতে ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ITLOS) মামলা করে। ১৪ মার্চ ২০১২ ITLOS বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা বিরোধ মামলার রায় দেয়। এ রায়ে বাংলাদেশ ১,১১,৬৩১ বর্গ কিমি সমুদ্রসীমা লাভ করে, যা আরেকটি বাংলাদেশের সমান প্রায়। ৮ অক্টোবর ২০০৯ বাংলাদেশ স্থায়ী সালিশী আদালতে (PCA) ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে মামলা করে। ৭ জুলাই ২০১৪ বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধের রায় প্রদান করে PCA। ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ লাভ করে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিমি। মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা অর্জন করে, যা আরেকটি বিজয়ের স্বাদ।
১৩ খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় বাংলাদেশ
খাত সমূহ | অবস্থান |
আউটসোর্সিং | বিশ্বে দ্বিতীয়, ফ্রিল্যন্সারের সংখ্যা ৬ লাখ, যা বিশ্বের প্রায় ২৭%। |
সবজি | সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, বার্ষিক উৎপাদন ১.৬০ কোটি টন। |
প্রবাসী আয় | প্রবাসী আয়, অর্জনের বিশ্বের সপ্তম, ২০২০ সালে আয় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। |
ইলিশ | ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম, বৈশ্বিক উৎপাদন ৮৬%। |
কাঁঠাল | কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, বার্ষিক উৎপাদন ১০ লাখ টন। |
তৈরি পোশাক রপ্তানি | তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে তৃতীয়, বৈশ্বিক হিস্যা ৬.৩০%। |
মিঠা পানির মাছ | মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, বৈশ্বিক উৎপাদন ১০%। |
আম | আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম, বার্ষিক উৎপাদন ২৪ লাখ টন। |
পাট | পাট উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, বৈশ্বিক উৎপাদন ৪২%। |
ছাগলের দুধ | ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, মাংস উৎপাদনে চতুর্থ। |
ধান | ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, বার্ষিক উৎপাদন ৩.৭৪ কোটি মে.টন। |
আলু | আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম, বার্ষিক উৎপাদন ১.০২ কোটি মে.টন। |
পেয়ারা | পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, বার্ষিক উৎপাদন ১০.৪৭ লাখ মে.টন। |
সূত্র: খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, ওয়ার্ল্ডফিশ ও মৎস্য অধিদপ্তর, ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিবিএস, অর্থ মন্ত্রণালয়, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ।