অর্থ–বাণিজ্য
ভুটানের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য
ভুটানের ১৬টি পণ্য নতুন করে শুল্কমুক্ত প্রবেশে সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (IRD) এ বিষয়ে ৪ আগস্ট ২০২২ আদেশ জারি করে, যা ৮ আগস্ট ২০২২ প্রকাশ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর ২০২০ স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (PTA) আওতায় ভুটানকে এ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ। যে ১৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয় সেগুলো হলো- দুধ, প্রাকৃতিক মধু, গম বা মেসলিনের আটা, জ্যাম, ফলের জেলি, মার্মালেড, সিমেন্ট ক্লিংকার, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, সাবান, পার্টিকেল বোর্ড, ফেরো সিলিকন, লৌহ অথবা নন-আলয় স্টিলের বার, রড, মিনারেল ওয়াটার, গমের ভুসি ও কাঠের আসবাবপত্র। আদেশ অনুযায়ী, ভুটান থেকে ১৬টি পণ্য আমদানিতে কোনো কাস্টমস ডিউটি বা ট্যাক্স আরোপ করা হবে না। উল্লেখ্য, PTA’র শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। অবশ্য ২০১০ পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের ৯০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে।
BSWF গঠনের সিদ্ধান্ত বাতিল
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (BSWF) গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে এ তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা পরবর্তী ৫ বছরে হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাতিল করা হয় ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ গঠনের সিন্ধান্ত।
চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর
চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোর (CMEC) দু’দেশের মধ্যে সংযোগকারী অবকাঠামোগত প্রকল্প। এটি Belt and Road Initiative (BRI)-এর একটি অর্থনৈতিক করিডর। CMEC চীনের ইউনান প্রদেশ ও মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলকে সংযুক্ত করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় ইউনান প্রদেশের কুনমিং থেকে মিয়ানমারের মুসে ও মান্দালয় হয়ে কিয়কপিউ এবং ইয়াঙ্গুন বন্দর পর্যন্ত সড়ক ও রেল অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। CMEC কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হলো চীনকে ভারত মহাসাগরকেন্দ্রিক জ্বালানি বাণিজ্যে সংযুক্ত করা। ভারত মহাসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালি ও দক্ষিণ চীন সাগর হয়ে বাণিজ্য চালানো একদিকে সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ। CMEC’র মাধ্যমে চীনের এ অসুবিধা অনেকটাই দূর হবে। CMEC’র সফল বাস্তবায়নের অর্থ হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব আরও শক্তিশালী হওয়া। আবার বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায়ও অনেকটাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে চীন। এরই মধ্যে পশ্চিমে গাদার (পাকিস্তান) বন্দর ও দক্ষিণে হাম্বানটোটা (শ্রীলংকা) বন্দরে নিজের শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করেছে চীন।
IMF’র ঋণ কড়চা
বাংলাদেশ সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি পূরণে IMF কাছে ঋণ সহায়তার আবেদন করে। এ প্রেক্ষাপটে IMF’র ঋণের হালচাল নিয়ে এই আয়োজন-
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা। বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা এর প্রধান কাজ। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করার জন্য নীতিমালা প্রদান করে। IMF’র মতে, ব্যক্তিগত ও আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারগুলো ক্রটিপূর্ণভাবে কাজ করে এবং অনেক দেশে আর্থিক বাজারগুলিতে সীমিত প্রবেশাধিকার থাকে। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সংস্থাটি সরকারি অর্থায়নের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠাটি বিকল্প অর্থায়নের জোগান দেয়।
পূর্ণরূপ: International Monetary Fund.
প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৪ সালে।
কার্যক্রম শুরু: ১ মার্চ ১৯৪৭।
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থার মর্যাদা লাভ: ১৫ নভেম্বর ১৯৪৭।
সদর দপ্তর: ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।
বর্তমান সদস্য: ১৯০টি
ঋণদানের শর্তসমূহ
যখন কোনো দেশের Balance of Payment বা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় রকমের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তারা IMF’র দ্বারস্থ হয়। IMF যখনই কোনো ঋণ দেয় তখনই কিছু শর্ত বা পরামর্শ দেয়। IMF’র ঋণ প্রদানের উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো- সরাসরি রপ্তানি এবং সম্পদ আহরণের ওপর অর্থনৈতিক আউটপুট ফোকাস করা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা, বাণিজ্য উদারীকরণ বা আমদানি ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অতিরিক্ত ব্যয় না করা। মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি অপসারণ, বেসরকারিকরণ বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের সমস্ত বা আংশিক মালিকানা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হস্তান্তর জাতীয় আইনের বিপরীতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অধিকার বৃদ্ধি করা, শাসন ব্যবস্থার উন্নতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
রিজার্ভ মুদ্রা
IMF’র সম্পূরক আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ফান্ড বা মজুত সম্পদ, যা SDR (Special Drawing Rights) নামে পরিচিত সদস্য দেশগুলোর জন্য SDR সুবিধা প্রবর্তনের জন্য ২৮ জুলাই ১৯৬৯ IMF’র গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। সংস্থার সদস্যরা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের প্রয়োজনে SDR-এ অন্তর্ভুক্ত মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ পায়। ১৯৭৪ সালের জুলাইয়ে রিজার্ভ বা মজুত মুদ্রা গ্রহণ করে। বর্তমানে IMF’র রিজার্ভ মুদ্রা ৫টি— মার্কিন ডলার, জাপানি ইয়েন, ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং, ইউরো ও ইউয়ান। ইউয়ান-এর অন্য নাম ‘রেনমিনবি’।
IMF থেকে বাংলাদেশের ঋণ
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ IMF’র কাছ থেকে ১০ বার ঋণ নেয়। তবে কোনোবারই ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। এসব ঋণের বিপরীতে IMF নানা শর্ত দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কিছু শর্ত মেনে নেয় আবার কিছু মেনে নেয়নি। ১৪ জুন ১৯৭৪ বাংলাদেশ প্রথম IMF’র কাছে থেকে ঋণ পেতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ IMF থেকে বছরে ১০০-১৫০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু IMF’র বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ECF) বর্ধিত তহবিল সহায়তা (EFF) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য গঠিত সহনশীলতা ও টেকসই তহবিল (RSF) এই তিন কর্মসূচি থেকেও আলাদা করে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। ECF থেকে নেওয়া ঋণে সুদ ও মাশুল দিতে হয় না। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ পরিশোধে সাড়ে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডও রয়েছে। বাকি দুটি তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদহার ১.৫৪ থেকে ১.৭৯%। সম্প্রতি বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে IMF’র নবগঠিত Resilience and Sustainability (RST) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণসহায়তার জন্য আবেদন করে। এই অর্থই বাংলাদেশের ইতিহাসে IMF থেকে সর্বোচ্চ ঋণ। RST ঋণের মেয়াদ ২০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর।
IMF থেকে বাংলাদেশের ঋণ গ্রহণ (হাজার SDR)
বার | চুক্তির তারিখ | সমাপ্তির তারিখ | অনুমোদিত ঋণ | ঋণ ছাড় |
১ম | ১৪.০৬.১৯৭৪ | ১৩.০৬.১৯৭৫ | ৩১,২৫০ | ৩১,২৫০ |
২য় | ২৮.০৭.১৯৭৫ | ২৭.০৭.১৯৭৬ | ৬২,৫০০ | ৬২,৫০০ |
৩য় | ৩০.০৭.১৯৭৯ | ২৯.০৭.১৯৮০ | ৮৫,০০০ | ৮৫,০০০ |
৪র্থ | ০৮.১২.১৯৮০ | ২১.০৬.১৯৮২ | ৮,০০,০০০ | ২,২০,০০০ |
৫ম | ২৮.০৩.১৯৮৩ | ৩১.০৮.১৯৮৩ | ৬৮,৪০০ | ৬৮,৪০০ |
৬ষ্ঠ | ০২.১২.১৯৮৫ | ৩০.০৬.১৯৮৭ | ১,৮০,০০০ | ১,৮০,০০০ |
৭ম | ০৬.০২.১৯৮৭ | ০৫.০২.১৯৯০ | ২,০১,২৫০ | ২,০১,২৫০ |
৮ম | ১০.০৮.১৯৯০ | ১৩.০৯.১৯৯৩ | ৩,৪৫,০০০ | ৩,৩০,০০০ |
৯ম | ২০.০৬.২০০৩ | ১৯.০৬.২০০৭ | ৪,০০,৩৩০ | ৩,১৬,৭৩০ |
১০ম | ১১.০৪.২০১২ | ১০.০৪.২০১৫ | ৬,৩৯,৯৬০ | ২,৭৪,২৬৯ |
মোট | ২৮,১৩,৬৯০ | ১৭,৬৯,৩৯৯ |
♦ ৯ম চুক্তি থেকে ৯৫,৬০৪ এবং ১০ম চুক্তি থেকে ২,৭৪,২৬৯ হাজার SDR পরিশোধ করা হয়নি।
কিউবা ও ইরানে রুশ পেমেন্ট কার্ড
২০২২ সালে ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র কিউবায় চালু হতে যাচ্ছে রাশিয়ার মির (Mir) পেমেন্ট কার্ড। কিউবা এবং রাশিয়ান ন্যাশনাল পেমেন্ট কার্ড সিস্টেম মির পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে ২০২১ সাল থেকে কাজ করছে। যার লক্ষ্য উভয় দেশের পেমেন্ট সিস্টেমগুলোকে আন্তঃসংযোগ করা। অন্যদিকে ২৭ জুলাই ২০২২ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান ঘোষণা দেয় শিগগিরই রাশিয়ার মির ব্যাংকিং কার্ডের মাধ্যমে অর্থপ্রদান গ্রহণ শুরু করবে। বর্তমানে ১০টি দেশ ও অঞ্চলে নগদ টাকা উত্তোলন এবং কেনাকাটায় অর্থ প্রদানে মির কার্ড ব্যবহৃত হয়। দেশগুলো তুরস্ক, ভিয়েতনাম, আর্মেনিয়া, উজবেকিস্তান, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, দক্ষিণ ওশেটিয়া এবং আবখাজিয়া।