রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪’ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। চাহিদা ও বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিন বছর পর পর রপ্তানি নীতি পরিবর্তন করা হয়।
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত: সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত বলতে সে সকল খাতকে বোঝায় যেখানে রপ্তানির বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ বিবিধ কারণে এ সম্ভাবনাকে তেমন কাজে লাগানো যায়নি, তবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে অধিকতর সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। যথা— অধিকমূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক, ডেনিম। কৃত্রিম ফাইবার । গার্মেন্টস এক্সেসরিজ। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য। প্লাস্টিক পণ্য। জুতা এবং চামড়াজাত পণ্য। পাটজাত পণ্য। কৃষি পণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য। জাহাজ ও সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার নির্মাণ। ফার্নিচার হোম টেক্সটাইল ও হোম ডেকর, টেরিটাওয়েল। লাগেজ। একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (API) এবং ল্যাবরেটরি বিকারক।
বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত: যে সকল পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে অথচ পণ্যগুলোর উৎপাদন, সরবরাহ এবং রপ্তানি ভিত্তি সুসংহত নয় সে সকল পণ্যের রপ্তানি ভিত্তি লক্ষ্যে বিশেষ খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যথা— ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য । পণ্য। মূল্য সংযোজিত হিমায়িত মৎস্য। প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং। কাটিং ও পোলিশকৃত মসৃন হীরা ও জুয়েলারি। পেপার ও পেপার প্রোডাক্টস। রাবার ও রাবারজাত পণ্য। রেশম সামগ্রী । হস্ত ও কারু পণ্য। লুঙ্গিসহ তাঁত শিল্পজাত পণ্য। ফটোভলটিক মডিউল (সোলার এনার্জি)। কাজুবাদাম। জীবন্ত ও প্রক্রিয়াজাত কাঁকড়া। খেলনা। আগর। হালাল ফ্যাশন (আবায়া ইত্যাদি, বোরকা, হিজাব)। হালাল মাংস ও মাংসজাত পণ্য এবং অন্যান্য হালাল পণ্য I রিসাইকেন্ড পণ্য। সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস,
আইসিটি পণ্য: BPO, Freelancing
বিশেষ উন্নয়নমূলক সেবা খাত: পর্যটন শিল্প। আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনসালটেন্সি সার্ভিসেস।
পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়
তৈরি পোশাকের বিশ্ববাণিজ্যে অনেক দিন ধরেই তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে। চীনের পরের অবস্থান অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা পেতেই এ লড়াই । এ প্রতিযোগিতায় ভিয়েতনামকে আবারও ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০২১ সাল শেষে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৪৭২ কোটি ডলার বেশি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) পরবর্তী প্রতিবেদনে দ্বিতীয় অবস্থানের এ স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। সদস্য দেশগুলোর রপ্তানি বাণিজ্যের বিশ্লেষণ নিয়ে প্রতিবছর জুনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি । বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) এবং ভিয়েতনামের ট্রেড প্রমোশন কাউন্সিলের (Vietrade) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩,৫৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, একই বছর ভিয়েতনামের রপ্তানির মোট পরিমাণ ৩,১০৮ কোটি ডলার। রপ্তানি বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বন্দর। ভিয়েতনামের আন্তর্জাতিক বন্দর আছে ১৬৩টি। বাংলাদেশের মাত্র তিনটি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ভিয়েতনামের বন্দরের সংখ্যা ৩২০টি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৭০টি।
আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক SWIFT
SWIFT কী?
SWIFT’র পূর্ণরূপ Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication I এটি হলো দ্রুত ও নিরাপদে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান ব্যবস্থা। SWIFT মূলত একটি তাৎক্ষণিক মেসেজিং ব্যবস্থা, যা কোনো লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহককে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেয়। SWIFT নেটওয়ার্ক দিয়ে সরাসরি অর্থ প্রেরণ করা যায় না, এটা শুধু অনলাইনে পেমেন্ট অর্ডার প্রেরণ করে। বিশ্বের অধিকাংশ ব্যাংক নিজেদের মধ্যকার বার্তা আদান-প্রদানের জন্য SWIFT নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। একটি ব্যাংক তাদের SWIFT নেটওয়ার্ক এ সংযুক্ত অন্য একটি ব্যাংককে। অর্থ পরিশোধের অনুরোধ পাঠায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেই আদেশ গ্রহণ করে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখলেও কোনো দেশের ওপর অবরোধ আরোপের আইনি ক্ষমতা নেই। SWIFT গঠিত হয় ৩ মে ১৯৭৩ এবং এর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের লা হয়ে। যদিও SWIFT একটি নিরাপদ উপায়ে আর্থিক বার্তা পরিবহন করে; কিন্তু এটি তার সদস্যদের জন্য অ্যাকাউন্ট বা নিষ্পত্তির কাজ করে না।
নিয়ন্ত্রক
SWIFT সৃষ্টি হয় আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান ব্যাংকসমূহের উদ্যোগে। বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের ১১,০০০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান SWIFT’র সঙ্গে যুক্ত। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ECB) এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে মিলে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম SWIFT’র কাজকর্ম তদারকি করে থাকে। কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে SWIFT’র কোনো প্রভাব থাকে না, বরং নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে কোনো দেশের কোন দেশের সরকারের ওপর।
রাশিয়াকে বহিষ্কার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাশিয়াকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলার জন্য SWIFT থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও । ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে SWIFT থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার । চিন্তা নতুন নয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের জন্য SWIFT থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়। তখন রাশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী আলেক্সি কুদিন ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এ ধরনের | পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার জিডিপি ৫% সংকুচিত হতে পারে। SWIFT থেকে রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলো বিচ্ছিন্ন থাকবে, সে ব্যাংকগুলোর বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে রুশ কোম্পানিসমূহ যাতে SWIFTY মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের মতো নির্ঝঞ্ঝাটে এবং তাৎক্ষণিক লেনদেন পরিচালনা করতে না পারে। এর ফলে এখন রাশিয়ার জ্বালানি এবং কৃষিপণ্য বিক্রির অর্থ আদায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ব্যাংকগুলোকে এখন সরাসরি একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এতে সময়ক্ষেপণ হবে এবং বাড়তি খরচ গুনতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত রুশ সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাস পাবে।
SWIFT’র বিকল্প
২০১৪ সালে হুমকির ফলেই রাশিয়া SWIFT’র বিকল্প হিসেবে Sistema Peredachi Finansovykh Soobscheniy (SPFS) নামে আর্থিক বার্তা স্থানান্তর করার একটি বিকল্প সিস্টেম স্থাপন করে। রাশিয়া ও চীনের মধ্যে যেন বাধামুক্ত বাণিজ্য হতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ২০১৫ সালে চীন একটি Cross-Border Interbank Payment System (CIPS) চালু করে। এর মাধ্যমেই বর্তমানে দেশটির স্থানীয় ব্যাংকগুলো তাদের ২০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ লেনদেন করছে। চীনের CIPS অবশ্য রাশিয়াকে একটি লাইফলাইন দিতে পারে এবং ডি-ডলারাইজেশনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। CIPS-এ মাত্র ৮০টি বিদেশি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত। SWIFT’র বিকল্প হিসেবে CIPS-কে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে রেনমিনবির অংশ এখনো খুবই সামান্য। বিশ্বব্যাপী অর্থ প্রদানের ২ শতাংশেরও কম, যা মার্কিন ডলারের ৪০ শতাংশ শেয়ার এবং ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। ফলে CIPS পেমেন্ট সিস্টেমটি এখনো খুব ছোট, SWIFT’র প্রায় ০.৩%। পরমাণু কর্মসূচির কারণে ২০১২ সালে ইরানের ওপর SWIFT’র নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফল হিসেবে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় অর্ধেক কমে যায় এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ হারায়। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) ২৯ নভেম্বর ২০১৯ SWIFT’র বিকল্প হিসেবে Support of Trade Exchanges (INSTEX) চালু করে। INSTEX বর্তমানে মানবিক বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনুমোদিত।