অর্থনীতি

রপ্তানি আয়ে মাইলফলক

৩ জুলাই, ২০২২ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে। এর মধ্য দিয়ে সেবা ছাড়া শুধু দেশের পণ্য রপ্তানি খাত প্রথমবারের মতো ৫,০০০ কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে। রপ্তানি আয়ে মোট প্রবৃদ্ধি হয় ৩৪.৩৮%। সেই সঙ্গে আরেকটি বড় অর্জন-তৈরি পোশাকের পর ৪টি খাত ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের ধাপ পার হয়। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১,০০০ কোটি ডলার ছড়িয়ে যায়। তারপর রপ্তানি আয় ২,০০০ কোটি ডলারের ঘরে পৌঁছাতে সময় লাগে পাঁচ বছর। অবশ্য ৩,০০০ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়ে যায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরেই। ৪,০০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। করোনার কারণে পরের দুই বছর রপ্তানি কমে যায়। বিদায়ী অর্থবছরে সব মিলিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৫,২০৮ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪,৮৬,৬৬৭ কোটি টাকার সমান।

 

১০০ কোটির পাঁচ রপ্তানি খাত (কোটি মা.ড)

অবস্থান

খাত

রপ্তানি

প্রথম

তৈরি পোশাক

৪,২৬১

দ্বিতীয়

হোমটেক্সটাইল

১৬২

তৃতীয়

চামড়া ও চামড়াজাত

১২৫

চতুর্থ

কৃষি প্রক্রিয়াজাত

১১৬

পঞ্চম

পাট ও পাটজাত

১১৩

 

ডলারের বিপরীতে সর্বোচ্চ রুবল (অর্থ-বাণিজ্য)

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই পশ্চিমা বিশ্ব একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে রাশিয়ার ওপর। এতে রুশ অর্থনীতি মুখ থুবড়ে না পড়ে উল্টো যুদ্ধের মাঝেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে রুবলের দাম। ইতোপূর্বে ইউরোর বিপরীতে রুবলের দাম বেড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। রুবল দিয়ে রুশ গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করছে বেশ কিছু দেশ ও প্রতিষ্ঠান। তার সুবাদেই চাহিদা বেড়েছে রুবলের। ফলে ডলার ও ইউরোর বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে রুশ মুদ্রা। ২০ মে, ২০২২ ডলার প্রতি রুশ মুদ্রার বিনিময় হার চলে আসে ৫৭.৬৭ রুবলে। অর্থাৎ ১ ডলারের বিনিময়ে ৫৭.৬৭ রুবল পাওয়া যাচ্ছে এখন। যুদ্ধ শুরুর ১৫ দিনের মধ্যে ১ ডলারে ১৫০ রুবল পাওয়া যেত।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি

ডলারের সাপেক্ষে অন্যান্য মুদ্রার দরপতনের বহুবিধ কারণ থাকলেও প্রধান কারন দুটি। এক. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পেট্রোলিয়াম থেকে রকমারি পণ্য সবকিছুরই দাম বেড়েছে। বহু ক্ষেত্রেই আমদানির পরিমাণ যেহেতু অন্তত স্বল্প মেয়াদে কমানো অসম্ভব, ফলে আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার নীতি বাড়িয়েছে। সমগ্র পৃথিবীতে আর্থিক খাতে ‍তুমুল অনিশ্চয়তা চলছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন। সুদহার বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলার সে দেশেই জমা রাখা লাভজনক, নিরাপদ। ফলে ভারতের মতো বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার ঢল পড়েছে। পুরো এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা এখন দুর্বল। চীনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন সব মুদ্রারই পতন ঘটছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের মুদ্রারও পতন অব্যাহত রয়েছে।

ভারতীয় রুপিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য

আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের ডলারের দর বাড়াতে দরপতন হচ্ছে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রার। ১১ জুলাই, ২০২২ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (RBI) এক বিজ্ঞাপ্তিতে জানায়, রুপির মাধ্যমেই যাতে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যাবে, তেমন ব্যবস্থা চালু করা হবে। অর্থাৎ চীন, রাশিয়ার পর তারাও ডলারকে পাশ কাটানোর নীতি গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে, বিশেষ করে রপ্তানিতে গতি আনতেই এ উদ্যোগ। রিজার্ভ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো দেশের মুদ্রাকে তখনই ‘আন্তর্জাতিক’ বলা হয়, যখন তার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লেনদেন করতে চায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আমেরিকান ডলার। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরো।

পাউন্ডের নোট ফেরত

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এর মধ্যে ২০ ও ৫০ পাউন্ড মূল্যমানের কাগুজে নোট তুলে নিয়ে তার পরিবর্তে পলিমারের তৈরি নতুন নোট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোকে তাদের কাছে থাকা এ দুটি কাগজের নোট যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠাতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো ৬ ও ৮ বিলিয়ন পাউন্ড সমমানের ২০ ও ৫০ পাউন্ডের কাগুজে নোট যুক্তরাজ্যের বাজারে রয়েছে।

রাশিয়ায় নতুন মুদ্রা

রিজার্ভ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হবে এমন একটি মুদ্রা চালু করতে চায় রাশিয়া। এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্য হ্রাস। বিশ্বের পাঁচ বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকসের সদস্য। এই পাঁচ দেশের কোনো একটি মুদ্রাকেই রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে বলে জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

স্বর্ণমুদ্রার যুগে জিম্বাবুয়ে

জিম্বাবুয়েতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এর ফলে মান কমেছে স্থানীয় মুদ্রার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২৫ জুলাই, ২০২২ থেকে বৈধ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা চালুর উদোগ নেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জন ম্যাংগুদা বলেন, স্বর্ণ মুদ্রা বিনিময় মূল্য হিসেবে কাজ করবে এবং এটি দেশে মার্কিন ডলারের চাহিদা হ্রাস করবে। স্থানীয় মুদ্রা এবং মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা দিয়েই এ স্বর্ণমুদ্রা জনগণের কাছে বিক্রি করা হবে। সে ক্ষেত্রে স্বর্ণমুদ্রার দাম প্রচলিত আন্তর্জাতিক মূল্য এবং উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে র্নিধারণ করা হবে। এ স্বর্ণমুদ্রার নামকরণ করা হবে জিম্বাবুয়ের জলপ্রপাত ভিক্টোরিয়া ফলসের নামানুসারে যা স্থানীয়ভাবে ‘মাসি-ওয়া-তুনয়ার’ নামে পরিচিত। জিম্বাবুয়ের ওই স্বর্ণমুদ্রায় এক ট্রয় আউন্স (৩১ গ্রামের বেশি) সোনা থাকবে। এগুলো বিক্রি করবে দেশটির ফিডোলিটি গোল্ড রিফাইনারি, অরেক্স ও স্থানীয় ব্যাংকগুলো। উল্লেখ্য ২০০৯ সালে দেশটি ১০০ ট্রিলিয়ন ডলার (জিম্বাবুয়ে) নোট বাজারে আনে। জিম্বাবুয়ের ডলারের ভয়াবহপতনের ফলে লোকজন ব্যাংকে অর্থ রাখা বাদ দিয়ে বাড়িতে অর্থ জমাতে শুরু করে। ফলে জুন ২০২২ জিম্বাবুয়ের মুদ্রাস্ফীতি ১৯১% এ দাড়িয়েছে।

 

Leave a Reply