নারী অর্থসচিবের স্বাক্ষরিত নতুন নোট
২৯ নভেম্বর ২০২২ নারী অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বাক্ষর করা দুই টাকার প্রথম মুদ্রিত নোট বাজারে আসে। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এই নোটগুলো ইস্যু করে বাজারে ছাড়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য কার্যালয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেও ইস্যু করা হয়। নতুন নোটের রং, পরিমাপ, জলছাপ, ডিজাইন ও অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বর্তমানে প্রচলিত নোটের মতোই।
দেশে প্রথম শুল্কনীতি
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে কোনো শুল্কনীতি নেই। শুল্কনীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন (BTTC) ৯ পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে।
শুল্কনীতিতে যা থাকছে
রপ্তানি শুল্ক, আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক এবং সরকার আরোপিত অন্য কোনো কর বা শুল্ক যা বাণিজ্য নিরপেক্ষ নয়, এমন সব শুল্ক প্রস্তাবিত শুল্কনীতির আওতায় থাকবে। এছাড়া এ নীতির আওতায় থাকবে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে আরোপযোগ্য শুল্ক ও কর বিষয়ক সব বিধিবিধান। বলা হয়েছে, শুল্ক কাঠামো সহজ করা এবং অপ্রয়োজনীয় জটিলতা পরিহার করাই হবে শুল্কনীতির উদ্দেশ্য দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শুল্ক প্রতিরক্ষণ হার ধাপে ধাপে কমানো, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটকে বাণিজ্য নিরপেক্ষ শুল্কে পরিণত করা, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক শুধু জরুরি পরিস্থিতিতে আরোপ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) সঙ্গে সংগতি রেখে ন্যূনতম আমদানিব্যবস্থা বিলুপ্ত করার কথা বলা হয় খসড়া নীতিতে।
কাঁচা পাট রপ্তানি এখন উন্মুক্ত
কাঁচা পাট রপ্তানি উন্মুক্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেটির অংশ হিসেবে ২০২১-২৪ সালের রপ্তানি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের তালিকা থেকে কাঁচা পাটকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২১ নভেম্বর ২০২২ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে। রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী, কাঁচা পাট এতদিন ছিল শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য।
বিকাশ-রকেটে সরাসরি রেমিট্যান্স
২৯ নভেম্বর, ২০২২ বিকাশ, রকেট ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (MFS) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি রেমিট্যান্স আনার সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ জন্য আগ্রহী মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে স্থানীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা হবে, যা প্রবাসীর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল হিসেবে টাকায় রূপান্তরিত হয়ে জমা হবে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা যথাযথ e-KYC পরিপালন করে মোবাইল ব্যাংকিং অর্থাৎ MFS-এ হিসাব খুলতে পারবেন। এ দেশীয় ব্যাংক মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট সুবিধা দিবে। ব্যাংকের বিদেশি নস্ট্রো হিসাবে অর্থ জমার পর ঐ অর্থের সমপরিমাণ টাকা সেটেলমেন্ট হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) জমা হবে। ‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ হলো বৈদেশিক মুদ্রায় দায়দেনা পরিশোধের জন্য বিদেশের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের পক্ষে বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট এলসির পেমেন্ট দেওয়া হয়। আবার রপ্তানি বিল ও রেমিট্যান্সের আয়ও নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে যোগ হয়।
মূল্যস্ফীতি হিসাবে নতুন পদ্ধতি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) জাতিসংঘ অনুমোদিত Classification of Individual Consumption According to Purpose (COICOP) ২০১৮ অনুসারে মূল্যস্ফীতি গণনা করবে। COICOP পদ্ধতিতে এক ভোক্তার চাহিদা অনুসারে খরচের প্রবণতা ধরে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়। দেশে এখনো ১৭ বছর আগের ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) মূল্যস্ফীতি গণনার পদ্ধতি ও ভিত্তি বছর-দুটোই পরিবর্তনের কথা ভাবছে। BBS’র জাতীয় আয় শাখা ২০২২-২৩ অর্থ বছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতির নতুন ভিত্তি বছর তৈরি কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি গণনার পদ্ধতি, পণ্য ও সেবার তালিকা এবং ভার ঠিক করা হয়। অনুমোদন পেলেই ২০২৩ সালের মার্চ মাস বা আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে নতুন ভিত্তি বছরে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হবে। নতুন নিয়মে মূল্যস্ফীতি গণনার প্রক্রিয়ার ২০১৬-১৭ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ থেকে মানুষের খরচের প্রবণতা বিবেচনা করা হয়। সেখান থেকে পণ্য ও সেবার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় প্রায় পণ্য ও সেবা নেওয়া হয়। যেহেতু ২০২২ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ শেষ হয়নি। তাই পাঁচ বছরের জরিপের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। দেশের বর্তমানে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, সাবান, লবণ, চিনি, স্বর্ণ, বই, খাতা-কলম, যাতায়াত খরচসহ ৪২৬টি পণ্য ও সেবা দিয়ে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। এছাড়া ঐ তালিকার সব কটি পণ্য ও সেবার ভার ধরা হয় ১০০। প্রতিটি পণ্য ও সেবার জন্য আলাদা করে ভার আছে।
বাধ্যতামূলক মান সনদে ১০টি পণ্য
১১ ডিসেম্বর ২০২২ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (BSTI) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কাউন্সিলের সভায় আরও ১০টি পণ্যকে বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত করে। পণ্যগুলো ডিসপোজেবল ডায়াপারস, ফেসওয়াশ, পেট্রোলিয়াম জেলি, রুটি (ফ্ল্যাটব্রেড বা টরটিলা), অ্যারোসলস, গিজার, শেভিং ফোম বা জেল, আই কেয়ার, হেয়ার ডাইস লিকুইড এবং শু পলিশিং লিকুইড। গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে বাধ্যতামূলক মান সনদের পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩৯টি। বর্তমানে BSTI’র বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্যের সংখ্যা ২২৯টি।
দেশের রপ্তানি ২০২১-২২
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি অর্থবছরে দেশের রপ্তানি খাতের অর্থপ্রাপ্তির পরিসংখ্যান নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রকাশ করা হয় এক্সপোর্ট রিসিপ্টস অব গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ২০২১-২২ শীর্ষক প্রতিবেদন।
খাত | খাতওয়ারি রপ্তানি | |
মিলিয়ন মা.ড. | কোটি টাকা | |
তৈরি পোশাক | ৩২,৬৮৬ | ২,৮২,৬৩৯.১ |
নীটওয়্যার | ১৯,৮৭২ | ১,৭১,৭৭২.৭ |
ওভেন গার্মেন্টস | ১২,৮১৪ | ১,১০,৮৬৬.৪ |
পাট ও পাটজাত পণ্য | ১,০১৫ | ৮,৭৬২.২ |
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য | ৭৩৪ | ৬,৩৪২.২ |
হোম টেক্সটাইল | ৬৮৩ | ৫,৯০৭.৮ |
মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য | ৪৬৬ | ৪,০১৩.০ |
রপ্তানি চিত্র: শীর্ষ ১০ দেশ
দেশ | মিলিয়ন মা. ড. | মোট রপ্তানির (%) | দেশ | মিলিয়ন মা. ড. | মোট রপ্তানির (%) |
যুক্তরাষ্ট্র | ৭,৩৯৭ | ১৯.২ | পোল্যান্ড | ১,৭০৩ | ৪.৪ |
জার্মানি | ৫,০৮১ | ১৩.২ | ভারত | ১,৫০৪ | ৩.৯ |
যুক্তরাজ্য | ৩,৫৪৩ | ৯.২ | ইতালি | ১,৪২৭ | ৩.৭ |
স্পেন | ২,৬২৯ | ৬.৮ | নেদারল্যান্ডস | ১,৩২২ | ৩.৪ |
ফ্রান্স | ২,১৫৩ | ৫.৬ | কানাডা | ১,১০৭ | ২.৯ |
[নোট: ইপিজেড ব্যতীত রপ্তানি]